অ্যালেক্স হেলস ও জস বাটলার দুজন মিলেই হারিয়ে দিয়েছেন ভারতকে। ভারতীয় বোলারদের একেবারে নির্বিষ মনে হয়েছে তাঁদের সামনে। ফাইনালে তেমনটা হওয়ার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন পাকিস্তান দলের বর্তমান মেন্টর ও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ম্যাথু হেইডেন, ‘ফাইনালে সেরা ব্যাটিংয়ের সামনে সেরা বোলিংয়ের প্রদর্শনী হবে। দারুণ একটা লড়াই হবে সেটা।
আর দর্শকরা তো এমন কিছুই দেখতে চায়। ’
পাকিস্তানের ফাস্ট বোলাররা ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপেও যে ভাঙন ধরাতে সক্ষম, এ নিয়ে তাঁর সন্দেহ নেই, ‘দারুণ ব্যাপার হলো, আমাদের চারজন দ্রুতগতির বোলার আছে, যারা ২০ ওভারের মধ্যে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপে ভাঙন ধরাবেও। ’ ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে ভারতের ঘাটতি অবশ্য স্পিনেও দেখেছেন এই সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার, ‘আমার যেটা মনে হয়েছে, ভারতের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে একজন লেগস্পিনারের ঘাটতি ছিল। ’ পাকিস্তান সেদিক থেকে পরিপূর্ণ বলেই মনে করেন তিনি, ‘আমাদের ছয় নম্বর বোলারও স্পেশালিস্ট একজন। প্রয়োজনে সপ্তম বোলারও ব্যবহার করতে পারব আমরা। ’
হেইডেন পাকিস্তানের ব্যাটিং কোচ ছিলেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এবার মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে নিজে মারকুটে ব্যাটার ছিলেন। এবার অবশ্য পাকিস্তানের সেই ব্যাটিং নিয়ে দুর্ভাবনা ছিল শুরুর দিকে। সেমিফাইনালে হেইডেন খুব করে চাইছিলেন তাঁর দুই ওপেনার যেন স্বরূপে ফেরেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে হয়েছেও তা-ই। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের এই জুটির প্রতি হেইডেনের কণ্ঠে প্রশস্তি ঝরেছে তাই ফাইনালের আগেও, ‘বাবর-রিজওয়ান অসাধারণ এক জুটি। তাদের রান, পরিসংখ্যানই তাদের হয়ে কথা বলবে। তবে আপনি শুধু তাদের মাঠের পারফরম্যান্সটা দেখেই তাদের পুরো বুঝতে পারবেন না। মাঠের বাইরেও অসাধারণ রসায়ন দুজনের। তাদের ব্যক্তিত্ব, দেশপ্রেম, ধর্মানুভূতি প্রায় একই রকম। আর ক্রিকেটে এসেই পুরোপুরি মিলে যায় এ দুজন। ’
তবে সব কিছুর পরও ফাইনালের দিনে পারফরম করতে পারাটা আসল, সেটাও মানছেন হেইডেন, ‘এই ম্যাচে চাপ সামলানোটা বড় চ্যালেঞ্জ। যে দল যত ভালোভাবে এটা করতে পারব; নিজেদের প্রস্তুতি, সামর্থ্য মাঠে ঢেলে দিতে পারবে, তারাই হাসবে শেষ হাসি। ’ পাকিস্তানকে সেই লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকার কথাই বলেছেন তাঁদের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। ভারত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও তাদের ফাইনালে ওঠাটাকে বড় কীর্তি উল্লেখ করে রমিজ বলেছেন, ‘এই ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে তোমাদের সবার গর্ব করা উচিত। অবিশ্ব্যাস্যভাবে তোমরা তা করে দেখিয়েছ। এটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে দলগতভাবে একাট্টা হয়ে খেলেছ বলেই। যখন তোমরা একে অন্যের জন্য খেলবে, তখন মাঠে এর প্রভাব পড়বেই। ’ রমিজ সেই ১৯৯২-র শিরোপাজয়ী দলে ছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি ফাইনালের আগে কাল মেলবোর্নে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেই স্মৃতিচারণাও করেছেন তিনি, ‘ম্যাচের আগে নিজেদের মধ্যে ছোট্ট আলোচনা হয়েছিল আমাদের। ইমরান (খান) ছিল অধিনায়ক। সে বলে, মাঠে গিয়ে সময়টা স্রেফ উপভোগ করো তোমরা। কারণ আমাদের জীবনে এমন উপলক্ষ আর আসেনি। ’
এই পাকিস্তান অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের মিশনে এখন। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরেরই শিরোপা জিতে নিয়েছিল তারা। সেটা ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। ২০১২ ও ২০১৬-তে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ আসরে এখনো পর্যন্ত দুটি শিরোপা একমাত্র তাদেরই। ক্যারিবীয়দের সেই রেকর্ড এবার ভাগাভাগি করতেই হচ্ছে। কারণ পাকিস্তান বা ইংল্যান্ড যারাই জিতুক, তারাই দ্বিতীয়বারের মতো ঘরে তুলবে এই ট্রফি। এএফপি, দ্য নিউজ