সংগৃহীত ছবি
রায় বাস্তবায়ন না করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হককে তলব করেছেন আদালত।
আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় আদালতে তাঁদের সশরীরে হাজির হতে বলেছেন আদালত।
আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করায় কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, হাজিরার দিন এ বিষয়ে সচিব ও মহাপরিদর্শককে ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। কারা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম।
আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরের ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার রায়ে ছয় জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, ইকবাল কবির চৌধুরী, মো. আনোয়ারুজ্জামান, মনির আহমেদ, মো. বজলুর রশিদ আকন্দ ও মো. নুরুননবী ভূঁইয়াকে ১৯৮৪ সালের নিয়োগ বিধি অনুসারে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও সেবা সুবিধা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পদোন্নতি পেলে তাঁরা জ্যেষ্ঠ জেল সুপার হতেন।
কিন্তু রায়ের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি।’
ইব্রাহীম খলির বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করলে গত ৬ নভেম্বর কারা অধিদপ্তরের আইনজীবী রায় বাস্তবায়নের জন্য দুই সপ্তাহ সময় নেন। আজ কারা অধিদপ্তরের পক্ষে হলফনামা করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রায় বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
এই কমিটি রায় বাস্তবায়নের সুযোগ নেই বলে অভিমত দিয়েছেন। পরে আদালত সচিব এবং কারা মহাপরিদর্শককে তলব করেন।’
আবেদনকারী ছয়জনের মধ্যে তিনজন অবসরে গেছেন জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘আদালত বলেছেন, রায় বাস্তবায়ন না করে এ ধরনের অভিমত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করলে সেটিও নমনীয়ভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
ইব্রাহীম খলিল জানান, ওই ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন।
তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ১৯৮৪ সালের নিয়োগ বিধি অনুসারে। ১৯৯৬ সালে নিয়োগ বিধি সংশোধন করে সরকার। ফলে তাঁদের পদোন্নতি হচ্ছিল না। পদোন্নতি না হওয়ায় ২০১৬ সালে তাঁরা প্রথমে সরকারের কাছে আবেদন করেন। এতে সাড়া না পেয়ে চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে পদোন্নতির জন্য মামলা করেন। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ১৯৮৪ সালের নিয়োগ বিধি অনুসারে তাঁদের পদোন্নতিসহ সেবা সুবিধা দিতে নির্দেশ দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে কারা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের আপিল মঞ্জুর করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করেন প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে আপিল বিভাগে দেওয়ানী লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন। পরে ওই বছরই এই খারিজ আদেশের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করা হয়।
গত বছরের ৭ এপ্রিল আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর রায় দেন। এ রায়ে লিভ টু আপিলের রায় ও প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
রায়ে বলা হয়, আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ২০০৬ সালে সংশোধীত নিয়োগ বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না। ১৯৮৪ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী তাঁদের পদোন্নতি ও সেবা সুবিধা বিবেচনা করতে হবে। এ রায় বাস্তবায়ন না করায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্টদের আদালত অবমাননার নেটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর কারা অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত জানতে চায়।
আইন মন্ত্রণালয় মতামতে জানায়, যেহেতু সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউয়ের (পুনর্বিবেচনার) পর আর কোনো বিচারিক ফোরাম নেই, সেহেতু পুনির্বিবেচনার রায় বাস্তবায়নে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। এরপরও রায় বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।