ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ায় আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় নির্বাচন। সব পরিকল্পনা ও বিশ্লেষকদের ধারণামতো হলে আগামী রবিবার পঞ্চম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। পুতিন অনেক দিন ধরে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকলেও তিনি কেন বারবার জয়ী হন, সে প্রশ্ন পুরনো হয়নি কখনো।
রুশ সংবিধান অনুযায়ী, ২০০৮ সালেই ভ্লাদিমির পুতিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আরো চার বছর রাশিয়া শাসন করেন পুতিন। বিরোধীদের ব্যাপক বিক্ষোভ সত্ত্বেও ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হন সোভিয়েত আমলের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির এই সাবেক কর্মকর্তা। ২০২০ সালে সংবিধানে পরিবর্তন এনে আরো দুই মেয়াদে মোট ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম করেন তিনি।
সমালোচকরা বলছেন, পুতিন তাঁর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছেন। তিনি জর্জিয়া ও ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছেন এবং বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করেছেন। পুতিনের শাসনামলে জনপ্রিয় বিরোধী নেতা বরিস নেমৎসভকে ২০১৫ সালে ক্রেমলিনের কাছে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। আরেক জনপ্রিয় বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে ২০২০ সালে বিষ প্রয়োগ করা হয়।
সে দফায় বেঁচে গেলেও গত মাসে কারাগারে তাঁর প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যু হয়। স্ত্রীর দাবি, পুতিনের সরাসরি নির্দেশে নাভালনিকে হত্যা করা হয়েছে। পুতিনবিরোধীদের কেউ কেউ কারাগারে আছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, আবার কাউকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।
কেন বারবার জয় পান পুতিন
২৪ বছর আগে বরিস ইয়েলৎসিনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে পুতিন গণমাধ্যম, আদালত, পার্লামেন্ট ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। পুতিনের শাসনে এখন ভিন্নমতের স্থান নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণকে বোঝানো হচ্ছে, শুধু পুতিনই তাদের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে পারেন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে দেখানো হচ্ছে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে, যা কেবল পুতিনই জিততে পারেন।
সমালোচকরা বলছেন, তিন দিনব্যাপী নির্বাচনের মাধ্যমে কারচুপির পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। রাশিয়ার ২৭টি অঞ্চল ও অধিকৃত ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলে ভোটাররা বিতর্কিত অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারবেন। এই ভোট যাচাইয়ের কোনো পন্থা নেই। স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা গোলোসকে বিদেশি গুপ্তচর ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর নেতা গ্রিগরি মেলকোনিয়ান্তোস এখন বিচারের মুখোমুখি। ২০২১ সালে রাশিয়ার একটি নির্বাচনে ব্যালটে ভোটে হেরে যাওয়া সত্ত্বেও অনলাইন ভোটিংয়ের কারণে জয় পান ক্রেমলিনপন্থী ৯ জন প্রার্থী।
নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ
পুতিনের কাছে এই নির্বাচনের উদ্দেশ্য বৈধতা অর্জন করা। এতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও বড় ধরনের সমর্থন আদায়ের দাবি করতে পারবেন তিনি। নির্বাচনের আগে অধিকৃত ইউক্রেনের বাসিন্দাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট দিতে বলছেন রুশ নির্বাচনকর্মী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রুশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রশাসন চাইছে—অন্তত ৭০ শতাংশ ভোট পড়ুক এবং পুতিন অন্তত ৮০ শতাংশ ভোট পান, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭৬.৭ শতাংশ। পুতিনের কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও ঝুঁকির মধ্যে আছে ক্রেমলিন। কারণ ২০২০ সালে কারচুপির মাধ্যমে প্রতিবেশী বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেংকো ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে গণবিক্ষোভ দেখা দেয়।
পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা
এবারের নির্বাচনে যে তিনজনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই ক্রেমলিনপন্থী। মূলত নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে এবং বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে তাঁদের ব্যবহার করছে পুতিন প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে নিকোলাই খারিতোনোভ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। ২০০৪ সালের নির্বাচনে তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লিওনিদ স্লুতস্কি ইউক্রেন যুদ্ধের বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছিলেন। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ পিপল পার্টির ভ্লাদিস্লাভ দাভানকোভও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের সমর্থক। নিউ পিপল পার্টিকে ‘ভুয়া দল’ আখ্যা দিয়ে সাংবাদিক দিমিত্রি কোলেজেভ বলেন, ‘এটি ক্রেমলিনের তৈরি একটি দল।’ যুদ্ধবিরোধী দুই প্রার্থী ইয়েকাতেরিনা দুনতসোভা ও বরিস নাদেঝদিনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া ২০০৬ সালে কোনো প্রার্থীকে বাছাই না করার ভোট বাতিল করে কমিশন-অর্থাৎ ব্যালটে থাকা কোনো না কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতেই হবে। ক্রেমলিনপন্থী জরিপ সংস্থা ভিসিআইওএমের আভাস, নির্বাচনে ৮২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হবেন পুতিন।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট