সূর্যের আলোর সঙ্গে ত্বকের সম্পর্ক

ত্বকের ওপর সূর্যের আলোর দুটি প্রধান প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে। সূর্যরশ্মিতে থাকা আলট্রাভায়োলেট এ (ইউভিএ) ও আলট্রাভায়োলেট বি (ইউভিবি) প্রধানত ত্বকের ওপর কাজ করে থাকে।

উপকারী কাজ

সূর্যের ইউভিবি রশ্মি ত্বকের ভেতরে থাকা কোলেস্টেরলের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি তৈরি করে থাকে। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এর অভাবে অনেক রকম ক্ষতি হয়ে থাকে, তার মধ্যে হাড়ের ঘনত্ব কমে তা দুর্বল হয়ে ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, শরীর সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া, অনিদ্রা, আহারে অরুচি ও চুল পড়ে যাওয়া অন্যতম প্রধান। এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সার্বিকভাবে কমে যায়।

কী করণীয়?

বলা হয়ে থাকে যে সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর থাকে তখন এর ইউভিবি রশ্মির বিকিরণ থাকে সর্বোচ্চ মাত্রায়। তবে আমাদের ত্বকের সবচেয়ে ওপরের স্তরে থাকে মেলানিন পিগমেন্ট।

এটি আমাদের ত্বকের রং নির্ধারণ করে থাকে। এগুলোর কাজ হচ্ছে সূর্যের ইউভি (আলট্রাভায়োলেট) রশ্মি, প্রধানত ইউভিবিকে ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া। তার পরও সূর্যরশ্মি এই বাধা অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকতে পারে। আমাদের বাদামি ত্বকে সূর্যরশ্মি ঢুকতে প্রায় আধাঘণ্টা সময় লেগে যায়।

আমাদের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ ত্বক সপ্তাহে আনুমানিক তিন দিন যদি ইউভিবি রশ্মি গ্রহণের জন্য এই সময় ধরে খোলা রাখতে পারা যায়, তাহলে তা আমাদের শরীরের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেকের জন্যই বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

অপকারী কাজ

আমাদের ত্বকে বার্ধক্য আসে প্রধানত দুটি উপায়ে। এক হলো সময়ের সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মে, আর দ্বিতীয় হলো সূর্যের ইউভি রশ্মির সঙ্গে সংস্পর্শের কারণে, যাকে ফটো-এজিং বলা হয়।

সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় কাটালে এবং তা নিয়মিত হলে সেটি ত্বকের অকাল বার্ধক্য ঘটাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সরাসরি সূর্যরশ্মিতে ত্বক খোলা না রাখাটাই শ্রেয়।

এ ছাড়া সূর্যের ইউভি রশ্মি ত্বকের মেলানিনের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়, যে কারণে ত্বক কালো হয়ে যায়, যা আমাদের দেশের মানুষের জন্য কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়।

আর শ্বেতাঙ্গরা যখন সূর্যস্নান করে ত্বককে বাদামি করতে চায়, তখন তাদের ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

তাই ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণের জন্য পুরোপুরিভাবে রোদের ওপর নির্ভর না করে ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ ডিম, দুধ, বাদাম ইত্যাদি খাবার এবং ভিটামিন ডি ওষুধ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

পরামর্শ দিয়েছেন

ডা. যাকিয়া মাহফুজা যাকারিয়া

সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডার্মাটোলজি

উত্তরা স্কিন কেয়ার অ্যান্ড লেজার, ঢাকা

LEAVE A REPLY