তাচ্ছিল্য যেমন পেয়েছি, লড়াইও করেছি : জাহিদ হাসান

জাহিদ হাসান

নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। নব্বই দশকে রাজত্ব করেছেন, এখনও শোবিজ অঙ্গনে তিনি বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে। সমানতালে কাজ করছেন নতুনদের সঙ্গেও। সম্প্রতি ‘উৎসব’ চলচ্চিত্র দিয়ে আবারও দশর্কদের মনে তৃপ্তির ছোঁয়া দিয়েছেন এ গুণী অভিনেতা।

গতকাল ছিল তার জন্মদিন। জন্মদিনে নিজের পুরনো জীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন জাহিদ হাসান। স্মরণ করেছেন সেই সংগ্রামী দিনগুলো। মেসজীবন থেকে আজকের জাহিদ হাসান, তারকাদের তারকা হয়ে উঠার জার্নিটা ছিল কঠিন।

তবে সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এ অভিনেতা।

জন্মদিন উপলক্ষে দেশের এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে জাহিদ হাসান জানান, কষ্টের দিনগুলোই তাকে গড়ে দিয়েছে। জাহিদ হাসান মনে করেন, জীবন তাকে শিখিয়েছে ভাগাভাগি, ছাড় দিতে জানা, কম্প্রোমাইজ করা। জাহিদ হাসান বলেন, ‘এই জীবনে দুঃখকষ্ট, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, অবহেলা, তাচ্ছিল্য—সবই পেয়েছি।

সবাই পায়, কমবেশি। সঠিকভাবে সামলে নিতে পারলেই হয়। কম্প্রোমাইজ করা, শেয়ার করা, ক্ষমা করে দেওয়া, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা—এসবই শিখেছি। এটাই করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে হতাশও হয়েছি।

আবার কাটিয়ে উঠেছি। তাচ্ছিল্য যেমন অনেক পেয়েছি, লড়াইও করেছি। এই তাচ্ছিল্য বা অবহেলার সময় কেউ না কেউ সঙ্গী হয়ে আসে। হয় মানুষ, না হয় বই কিংবা একটা গান। ’  

সিরাজগঞ্জ থেকে আশির দশকের শেষ দিকে ঢাকায় এসে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে এক মেসে ওঠেন জাহিদ হাসান। চার–পাঁচজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতে হতো একটি ঘরে। মেসজীবনের স্মৃতিচারণা করে অভিনেতা বলেন, ‘মেসজীবনের শুরুতে এমনও দেখেছি যে বাথরুমে সাবান, শ্যাম্পু রেখে আসতাম, পরে আরেকজন এসে বলত, “বাথরুমে রেখে এসেছ কেন, আরেকজন তো ব্যবহার করবে।” আমি বলতাম, “করুক। সমস্যা কী?” অথচ সাবান পাতলা কাগজের মতো হয়ে যেত। শ্যাম্পু বোতলে থাকত না। তবে কষ্টের মধ্যেও একধরনের শান্তি আছে, আবার অশান্তিও আছে। জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। তাই কষ্টের পরের সুখটা আসলে অন্য রকম।’

জীবন প্রসঙ্গে জাহিদ হাসান আরো বলেন, ‘জীবনটা আসলে আয়নার মতো। আয়নায় আমি ভেংচি কাটলে আয়নাও ভেংচি কাটবে। হাসলে আয়নাও হাসবে। আবার অনেক সময় জীবনটা কাঁঠালের মতো, কোনো কিছুই ফেলনা নয়।

জাহিদ হাসান ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে তার নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইলিয়াস উদ্দিন তালুকদার ছিলেন একজন কাস্টম কর্মকর্তা ও মা হামিদা বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। ৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রথম সারির অভিনেতাদের একজন হিসেবে কাজ করছেন জাহিদ হাসান। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন’, ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মতো নাটকগুলো তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে আসে। টেলিভিশন ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়েও আসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ তার অভিনীত অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে মতি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটক পরিচালনা করে থাকেন। তার পরিচালিত প্রথম মেগা ধারাবাহিক ‘লাল নীল বেগুনি’। তার পরিচালিত অন্যান্য টেলিভিশন ধারাবাহিক সমূহ হল, ‘ঘুঘুর বাসা’, ‘চোর কুটুরি’, ‘একা’ ও ‘ছন্নছাড়া’। তার পরিচালিত টেলিভিশন নাটক ও টেলিছবিসমূহ হল ‘রুমঝুম’, ‘বোকা মানুষ’, ‘ব্যবধান’, ‘স্বপ্নের গ্রহ’, ‘অপু দ্য গ্রেট’, ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ’ ও ‘বাউন্ডুলে এক্সপ্রেস’।

জাহিদ হাসান প্রতিষ্ঠিত মডেলকন্যা সাদিয়া ইসলাম মৌ-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। মেয়ের নাম পুস্পিতা এবং ছেলের নাম পূর্ণ। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। তার ‘পুস্পিতা প্রডাকশন লিমিটেড’ নামক একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে।

LEAVE A REPLY