নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত হলো দেশের বহুল আলোচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে ১৪ জনকে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাত ৯টা ২০ মিনিটে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ৮৪ বছর বয়সে এই দায়িত্ব নিলেন ড. ইউনূস। বাকি তিনজন সদস্য ঢাকার বাইরে থাকায় তারা পরে শপথ নেবেন। এবার সবাইকে অবাক করে নতুন সরকারে বৈষম্যবিরোধী দুই সমন্বয়ককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।
পরিষদের অন্য সদস্যরা হলেন-বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বেসরকারি সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান, সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক-মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া, বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, হেফাজতে ইসলামের নেতা আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং বেসরকারি সেবা সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। তবে তিনজন সদস্য ঢাকার বাইরে থাকায় তারা পরে শপথ নেবেন। এরা হলেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় এবং মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক।
বঙ্গভবনের দরবার হলে বিভিন্ন শ্রেণির পেশার ৪০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী নেতারা, দেশি বিদেশি কূটনৈতিক, পেশাজীবী এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। তবে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। এদিকে দেশের অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ায় ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নিতে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১৩ মিনিটে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকায় আসেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এ সময়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করাই আমার প্রথম কাজ। এয়ারপোর্ট থেকে গুলশানের নিজ বাসায় যান তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় যান বঙ্গভবনে। এদিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের কারণে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এক মামলায় ড. ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড ছিল। এটি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে তার আইনি বাধা ছিল। কিন্তু বুধবার আদালতের দেওয়া রায়ে কারাদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এর ফলে সরকারপ্রধান হিসাবে শপথ নিতে তার কোনো আইনগত বাধা দূর হয়।
প্রসঙ্গত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তিনি বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অন্য মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হয়। অর্থাৎ সোমবারই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়েছে।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। ওইদিনই (সোমবার) আওয়ামী লীগ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে মঙ্গলবার তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়কের বৈঠক হয়। এতে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে উপদেষ্টা পরিষদে অন্যান্য আর কে থাকবেন তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি।
এদিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সোমবার বৈঠক করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সমস্যার সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সমস্যার সমাধান দরকার। তিনি এ সংকটকালীন সমস্যার সমাধানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। বুধবার বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বৃহস্পতিবার বিকাল ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনার পর উপদেষ্টাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
শপথ অনুষ্ঠান : শপথ অনুষ্ঠান পরিচালক করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। রাত ৯টা ১৪ মিনিটে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. ইউনূসকে ৯টা ২০ মিনিটে শপথবাক্য পাঠান করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর তাকে পাঠ করানোর হয় গোপনীয়তার শপথ। প্রধান উপদেষ্টার পর ৯টা ২৭ মিনিটে ১৪ উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করানো হয়। তবে এই উপদেষ্টা পরিষদের মেয়াদ কতদিন হবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, কমপক্ষে তিন বছর তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এই সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এর মানে আগামী ২০২৭ সালের ৮ অক্টোবরের মধ্যে বিদায় নিতে হবে। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারকে গুরুত্ব দেবেন তারা।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য প্রস্তুত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। ভবনটি তার কার্যালয় ও বাসভবন হিসাবে ব্যবহার হবে। শেখ হাসিনা পালানোর পর বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। এতে আপাতত এই দুই জায়গা ব্যবহার উপযোগী নয়। এছাড়াও অন্যান্য উপদেষ্টাদের জন্য রাজধানীর বেইলি রোড, মিন্টো রোড, হেয়ার রোডের ২০টি বাংলো বাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২২টি নতুন গাড়ি। পরিবহন পুল থেকে এসব গাড়ি গেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। প্রধান উপদেষ্টার বরাদ্দ হয়েছে বিএমডব্লিউর অত্যাধুনিক সিরিজের গাড়ি। উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ গাড়িগুলো টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড মডেলের।
উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক : নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এর ফলে বাংলাদেশে নতুন ইসিহাস সৃষ্টি হলো। কারণ এরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঢাকার বনশ্রীর ছেলে নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লায়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তাদের আন্দোলনেই সরকারের পতন হয়। তাদের উপদেষ্টা পরিষদে রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অনড় ছিলেন ড. ইউনূস।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার দাবিতে গত ১ জুলাই শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ওই আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া গুলি, গণগ্রেফতার এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা ও সংঘর্ষ একপর্যায়ে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার কারফিউ ভেঙে গণভবন অভিমুখো লাখো মানুষের ঢল নামলে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
এতে আরও জানানো হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ মাত্র ছয় মাসের মাথায় ভেঙে দেওয়া হলো। সংসদ ভেঙে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একচ্ছত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন শেখ হাসিনা। একই বছরের ৩০ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ওই হিসাবে সরকার গঠনের মাত্র ছয় মাসের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। আর সংসদ গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় তা ভেঙে দেওয়া হলো। এর আগে সোমবার শেষ রাতের দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই প্রস্তাবে সম্মতি দেন তিনি। এ বিষয়ে ড. ইউনূস গতকাল বলেছেন, যে ছাত্ররা এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, এই কঠিন সময়ে তারা যখন আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছে, আমি কীভাবে তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারি।
শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার। পুলিশ না থাকায় নিরাপত্তা না থাকায় ওই অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেননি বলে ইসি সচিবালয় জানিয়েছে। যদিও তাদেরকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের একান্ত সচিব রিয়াজ উদ্দিন গতকাল রাতে যুগান্তরকে বলেন, স্যাররা (নির্বাচন কমিশনারগণ) দাওয়াত পেয়েছেন। তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ নেই। শুধু গাড়িচালক নিয়ে সিইসি স্যার ও আহসান হাবিব স্যার (বৃহস্পতিবার) অফিসও করেছেন। কিন্তু পুলিশের নিরাপত্তা না থাকায় স্যারদের শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, নিরাপত্তাজনিত বিষয় ছাড়াও আরও কিছু কারণে তারা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। তবে ওই কারণ জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উপদেষ্টাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া : শপথ নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, যে শক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো না হয়ে যাই। তাহলে আমাদের অর্জন ও মাহাত্ম্য ম্লান হয়ে যাবে। ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছে, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অনেক পুলিশ সদস্য, অনেক সংখ্যালঘু মানুষের আর্তনাদ শুনেছি, অনেক স্টোরি আছে, যা আমি নিজে শুনেছি। এটা কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। আমাদের ক্রোধ সংবরণ করতে হবে। আইনগতভাবে যারা দোষী আছে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু পুরোনোরা নয়, নতুনরাও দেশের হাল ধরতে পারে তা প্রমাণ করব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে যে স্বৈরাচার বড় বড় রাজনৈতিক দল হটাতে পারেনি তা মাত্র ৪ দিনে আমাদের কর্মস্পৃহা দিয়ে অর্জন করেছি। আমাদের এ কর্মস্পৃহা দেশপ্রেম দিয়ে আমরা প্রমাণ করব শুধু পুরোনোরা নয় নতুনরাও দেশের হাল ধরতে পারে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক সংগঠনসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গঠনের প্রচেষ্টা নিয়েছিলাম। গত ৩ দিন আমরা দীর্ঘ প্রচেষ্টাও সবার সম্মতিতে এমন একটি সরকার গঠন করতে পেরেছি। এ সরকার সারা দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন এ উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন। তবে এর আগে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করা প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন যমুনায়, অন্যরা মন্ত্রিপাড়ায় : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য মন্ত্রিপাড়ার মোট ২০টি সরকারি বাংলো বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। অন্যরা কে কোন বাসায় উঠবেন, তা পরে ঠিক হবে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ১৭ জন। বাকি তিনটি বাংলো প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করা হবে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত এসব ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য বাসভবন প্রস্তুত করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চিঠি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে আবাসন পরিদপ্তর। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মন্ত্রীপাড়ার এসব বাংলোতে সদ্য বিদায়ি সরকারের মন্ত্রীরা থাকতেন। সাবেক মন্ত্রীরা সবাই বাসভবন ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তাদের মালামাল এখনো বাংলোতে আছে। এসব মালামাল আগামী শনিবারের মধ্যে সরিয়ে নিতে একান্ত সচিবদের (পিএস) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।