‘প্রজেক্টের মেরুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজককে ভ্যালু দেওয়া হয় না’

সংগৃহীত ছবি

লাইন প্রডিউসার হিসেবে ২০০৭ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এর পরই অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সঙ্গে কাজ, তার মাধ্যমেই চিনলেন নতুন পথ। হাফ স্টপ ডাউনের মাধ্যমে প্রযোজনায় যাত্রা শুরু মো. আসাদুজ্জামান সকালের। এক দশকে প্রযোজনা করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি, ওয়েব সিরিজ, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

এরপর নিজেই খুলেছেন নতুন প্রযোজনা সংস্থা ডিজিটাল শ্যাডো। এবার ঈদে মুক্তি পেয়েছে তার সহ-প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’। সিরিজ, প্রযোজনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ইমরুল নূর।    

ঈদে মুক্তি পেল আপনার প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’।

সিরিজটি মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

বেশ ভালো। যারা সিরিজটি দেখেছেন তাদের কাছে ভালো লেগেছে, উপভোগ করেছেন তারা। হাস্যরসাত্মক গল্পের মাধ্যমে যে বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা, দর্শক তা বুঝতে পেরেছেন। 

সিরিজটি প্রযোজনা করতে আগ্রহী হলেন কেন?

আমি বরাবরই এমন কাজের প্রতি আগ্রহী যেখানে নতুন কিছু বলা যায়, না বলা কথাগুলো ফুটিয়ে তোলা যায়।

যখন ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’-এর প্রাথমিক ধারণা শুনি, তখনই বুঝি—এটা আমাদের সমাজ ও সময়কে নিয়ে এক সাহসী গল্প। নির্মাণের ভিশনটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, প্রযোজনা করতে আগ্রহটা একেবারে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে।

‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ আমার কাছে শুধু একটি ওয়েব সিরিজ নয়, বরং এটি সময়ের গল্প বলা, বাস্তবতা এবং রূপকের সংমিশ্রণে নতুন এক ধরনের কনটেন্ট। সিরিজটির গল্প, নির্মাণশৈলী এবং চরিত্রগুলোর জার্নি আমাকে শুরু থেকেই টেনেছে। ঈদের সময় দর্শকরা ভিন্নধর্মী কিছু খুঁজে থাকেন—এই সিরিজটি ঠিক সেই জায়গা থেকেই তৈরি করা হয়েছে।

দীর্ঘ অনেক বছর ধরেই আপনি বিজ্ঞাপন প্রযোজনা করে আসছেন। পাশাপাশি সিনেমাও করছেন। দুইটা তো একদমই আলাদা ইন্ডাস্ট্রি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইন্ডাস্ট্রি প্রযোজকদের জন্য কতটা কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং?

দুইটা ইন্ডাস্ট্রির রিদম একদম আলাদা। বিজ্ঞাপনে কাজের সময়সীমা, বাজেট এবং ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ, আর সিনেমায় গল্প ও দর্শকের আবেগের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। বর্তমানে প্রযোজকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সাসটেইনেবল মডেল খুঁজে পাওয়া। ওটিটি প্ল্যাটফরম এসেছে, কিন্তু বাজেট, রিটার্ন ও কনটেন্টের ভারসাম্য তৈরি করাটা কঠিন।

কোনো কাজের ক্ষেত্রে একজন প্রযোজকের চ্যালেঞ্জটা কোথায়?

একজন প্রযোজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ‘ভিশনকে বাস্তবে রূপ দেওয়া’। বাজেট, টেকনিক্যাল লজিস্টিক, ট্যালেন্ট, লোকেশন, সময়—সব কিছুর একটা ব্যালান্স করতে হয়, যাতে নির্মাতার কল্পনা স্ক্রিনে ঠিকভাবে ফুটে ওঠে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রত্যেক মানুষের ইগো, আবেগ ও চাপের মাঝে একটা পজিটিভ টোন বজায় রাখা।

বিজ্ঞাপন নাকি সিনেমা, কোন ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে আছে বলে মনে হয় আপনার কাছে?

টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল দিক থেকে বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি অনেক এগিয়ে। সেখানে স্ট্রাকচার, বাজেট, ডেলিভারি টাইমলাইন স্পষ্ট থাকে। তবে সিনেমা ও কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রি এখন একটা রেনেসাঁর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভালো গল্প আর নতুন ভিশন থাকলে সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। আমি বলব—দুই ইন্ডাস্ট্রিই আলাদাভাবে এগোচ্ছে।

যে হারে শিল্পী-নির্মাতা বাড়ছে ইন্ডাস্ট্রিতে, সে হারে প্রযোজক বাড়ছে না কেন?

কারণ প্রযোজক হওয়ার জন্য শুধু সৃজনশীলতা না, আর্থিক ঝুঁকি, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, আর লম্বা সময় ধরে কনসিস্টেন্ট থাকা লাগে। অনেকেই চাইলেও এই ভার বহন করতে পারেন না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজককে সঠিকভাবে ভ্যালু দেওয়া হয় না, অথচ তিনিই পুরো প্রজেক্টের মেরুদণ্ড। এটা বদলাতে হবে। নতুন প্রযোজকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হলে হয়তো সংখ্যাটা বাড়বে।

সামনে নতুন কী প্রজেক্ট আসছে আপনার?

আমরা এখন কয়েকটা আন্তর্জাতিক কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গল্পকে বিশ্বদর্শকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। একটি ফিচার ফিল্ম, একটি ডকুফিকশন এবং দুটি ওটিটি প্ল্যাটফরমের সিরিজ ডেভেলপমেন্টে আছি। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ান ডায়াসপোরার গল্প নিয়েও কিছু পরিকল্পনা চলছে।

LEAVE A REPLY