সামিরা খান মাহি
বানের জলে ভাসছে মানুষ। শহরের নিরাপদ বলয়ে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি সামিরা খান মাহি, ছুটে গিয়েছিলেন বন্যার্ত মানুষের কাছে। সেই জলে ভাসা অধ্যায় সম্পন্ন করে নিজের চেনা বলয়- অর্থাৎ শুটিংয়ে ফিরেছেন অভিনেত্রী। শুটিং স্পট থেকেই কথা বললেন কামরুল ইসলামের সঙ্গে।
পুরান ঢাকা থেকে বলছি
বানভাসিদের সহযোগিতায় কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ একটা ধকল গেছে মাহির ওপর দিয়ে। ঢাকায় ফিরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তাই ৭ সেপ্টেম্বর ফিরলেন শুটিংয়ে। প্রথম দুই দিন অভিনয় করেছেন অলোক হাসানের একটি নাটকে। গতকাল যোগ দিয়েছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আইয়ের একটি ওটিটি কনটেন্টের চিত্রায়ণে।
মাহি বলেন, ‘এখন (গতকাল বিকেল) আছি পুরান ঢাকায়। একটি ওটিটি কনটেন্টের শুটিং করছি। ইনফ্যাক্ট এখনো শট শুরু হয়নি, সবে মেকআপ নিচ্ছি। একটু পরে শুরু হবে।
এতে আমার সঙ্গে আছেন ইন্তেখাব দিনার, সুষমা সরকার, আবু হুরায়রা তানভীরসহ অনেকে।
লটারি ও মাহি
রবিবার এনটিভির ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে মাহি অভিনীত নতুন টেলিছবি ‘বকুলের লটারি’। রাকেশ বসুর এই টেলিছবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিনেত্রী বললেন, ‘এটা আগে নির্মিত। সম্ভবত পাঁচ-ছয় মাস আগের। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে হয়তো চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দেরি করে মুক্তি দিয়েছে।
’
লটারি নিয়ে নাটক, তাই জিজ্ঞেস করা, বাস্তবে কখনো লটারি কিনে জিতেছেন? মাহির জবাব, ‘না, কখনো লটারি কেনা হয়নি, তাই জেতাও হয়নি।’
মাহির দৃষ্টিতে সহশিল্পী যেমন
‘বকুলের লটারি’ টেলিছবিতে মাহির সঙ্গে রয়েছেন সোহেল মণ্ডল। যিনি ওটিটি ও সিনেমায় নিজেকে মেলে ধরেছেন। পাশাপাশি নাটকেও এখন নিয়মিত কাজ করছেন। মাহির সঙ্গে এর আগে ‘তোমার প্রেমে’ ও ‘পরাজিত’ নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। সহশিল্পী হিসেবে সোহেল কেমন? মাহি বলেন, ‘শুটিংয়ের হিসেবে সোহেলের সঙ্গে এটা (বকুলের লটারি) আমার দ্বিতীয় কাজ। সোহেল বেশ ভালো। চুপচাপ, তবে শুটিংয়ে বোঝাপড়ায় সমস্যা হয় না। কারণ বেশ মনোযোগী থাকে। সহশিল্পীর বাইরে কেমন, সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শুটিংয়ের সময় কেমন। অন ক্যামেরায় সোহেল একজন ভালো সহশিল্পী।’
বানভাসিদের তরে মাহি
কয়েক সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে প্রথমে ফেনী এবং পরে কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের বন্যার্তদের সহযোগিতায় কাজ করেছেন মাহি। পানিবন্দি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাবার। কেমন ছিল সে জলে ভাসা সময়? ‘আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড বলা যায়। জীবনে এ রকম অভিজ্ঞতা হবে, কখনো ভাবিনি। কোনো লাভের জন্য না, মনের শান্তি আর মানুষকে সহযোগিতার জন্যই গিয়েছিলাম। এ রকম পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। খুব কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল। অনেক মানুষের কষ্ট, দুর্দশা দেখেছি, যা আগে সিনেমায় দেখতাম। আমরা শুধু খাবার বিতরণ করেছি। এর বেশি কিছু করতে পারিনি। এ নিয়ে আক্ষেপ থেকে যাবে। চোখের সামনে এত দুর্দশা দেখে মনে হচ্ছিল সামর্থ্য থাকলে সব কিছু করে ফেলতাম। কিন্তু পারিনি, তাই দিনশেষে খারাপ লাগে’—বললেন মাহি।
পরিকল্পনায় পুনর্বাসন
বন্যার সময় যেমন সহযোগিতা প্রয়োজন, বন্যা-পরবর্তী সময়ে তা আরো জরুরি হয়ে পড়ে। নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। এই পুনর্বাসন নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা আছে বলে জানালেন মাহি। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার তো আসলে খুব ছোট একটা দল। কারো কাছ থেকে সেভাবে অনুদান নিচ্ছি না। আমাদের কিছু অর্থ জমা আছে। যাদের বাড়িঘর বন্যায় একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, ও রকম কাউকে খুঁজছি। আমরা নিজেরা গিয়েই সহযোগিতা করব। এর মধ্যে শুটিং শুরু হয়ে গেল। তাই পরিকল্পনাটা একটু পেছাচ্ছি।’
নতুন কাজের খবর
আন্দোলন-বন্যায় প্রায় দুই মাসের বিরতির পর নতুন নাটক-সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে। বাতিল হওয়া প্রজেক্টগুলো নতুন শিডিউলে সচল করছেন সংশ্লিষ্টরা। মাহিও ধীরে ধীরে মুখর হচ্ছেন শুটিংয়ে। নতুন কাজের কথা স্পষ্ট করে না বললেও এতটুকু বললেন, ‘ওটিটি, নাটক মিলিয়ে অনেক কাজের প্ল্যান চলছে। তবে চূড়ান্ত হয়নি। সব কিছু পুরোপুরি ঠিক হতে তো আরেকটু সময় লাগবে। দেখা যাক কী হয়।’