দেশের ৬৮.২ শতাংশ নারী এবং ৪৫.৯ শতাংশ পুরুষ এখনো উচ্চকক্ষের পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন। শহুরে জনগোষ্ঠীর তুলনায় গ্রামীণ নাগরিকরা পিআর সম্পর্কে অনেক কম জানেন। বেসরকারি সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং পরিচালিত ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে আয়োজিত ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ইনোভিশন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ড. আসিফ শাহান, জামায়াতের ড. নকিবুর রহমান, এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, নীতি বিশ্লেষক ড. অনন্য রায়হান, বাংলা আউটলুকের মোকতাদির রশিদ এবং গবেষণা সংস্থা ব্রেইনের ড. শফিকুর রহমান। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারওয়ার।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৭ দশমিক ১ শতাংশ নারী ও ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ পিআর চান না। জেনারেশন জেড (জেন-জি) ভোটারদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা সবচেয়ে বেশি। আলোচকরা মনে করেন, পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এখন অত্যন্ত জরুরি। তারা বলেন, তরুণ প্রজন্মের চেতনা বা ‘স্পিরিট’ যথাযথভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে জেন-জি, নারী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি সুষ্ঠু, সাধারণ ও স্বাভাবিক নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে। জনগণের বিশ্বাস, এই সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। জরিপে উঠে আসে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় দেশের ছয়টি বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। রংপুর বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বরিশাল বিভাগে এগিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ। ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি এগিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপি ৪৫.৭ শতাংশ, জামায়াত ২৫.৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৭.৩ শতাংশ ও এনসিপি ৪.৭ শতাংশ। সিলেটে বিএনপি ৪৪.৭ শতাংশ, জামায়াত ২৯.৬ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ১৪ শতাংশ। রাজশাহীতে বিএনপি ৪৪.৪ শতাংশ, জামায়াত ৪০.৯ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ৯.২ শতাংশ। খুলনায় বিএনপি ৪৩.৩ শতাংশ, জামায়াত ৩০.১ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৮.৩ শতাংশ। ঢাকায় বিএনপি ৪০.৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ২৫.৮ শতাংশ এবং জামায়াত ২৪.৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিএনপি ৪১.৯ শতাংশ, জামায়াত ২৭.৬ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ১৭.১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে।
অন্যদিকে, রংপুর বিভাগে জামায়াত এগিয়ে ৪৩.৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে, যেখানে বিএনপি ৩৬.৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১২.৫ শতাংশ। বরিশালে আওয়ামী লীগ এগিয়ে ৩১.৯ শতাংশ ভোটার সমর্থন, বিএনপি ২৮.৭ শতাংশ ও জামায়াত ২৯.১ শতাংশ। সার্বিকভাবে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় বিএনপি প্রথম, জামায়াত দ্বিতীয়, আওয়ামী লীগ তৃতীয় এবং এনসিপি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ইনোভিশনের তথ্যমতে, জরিপটি পরিচালিত হয় দেশের ৬৪ জেলায়, মোট ১০,৪১৩ ভোটার বয়সি নাগরিকের মধ্যে।
এলাকা অনুযায়ী ৬৯.৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী গ্রামীণ এবং ৩০.৫ শতাংশ শহুরে নাগরিক অংশগ্রহণ করে এই জরিপে। পুরুষ ৫৪.২ শতাংশ, নারী ৪৫.৪ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের অংশগ্রহণ ০.৪ শতাংশ। বয়সভিত্তিক জেন জি (১৮-২৮ বছর) ৩৭.৬ শতাংশ, মিলেনিয়াল (২৯-৪৪ বছর) ৩৩.৪ শতাংশ, জেন এক্স (৪৫-৬০ বছর) ১৯.৮ শতাংশ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটার ১.৩ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক নমুনায় ঢাকা বিভাগে ২৫.৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৫ শতাংশ, খুলনায় ১১.২ শতাংশ, রংপুরে ১১ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৯.৫ শতাংশ, বরিশালে ৬.২ শতাংশ এবং সিলেটে ৫.৩ শতাংশ অংশগ্রহণ করেছে।
‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’র দ্বিতীয় পর্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর। এতে দুটি খণ্ড রয়েছে। প্রথম খণ্ডে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি, নির্বাচনের সময়কাল, পরিবেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যসম্পাদন-সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় খণ্ডে আলোচিত হয়েছে ভোটারদের দলীয় পছন্দ, অনুমোদন, ভোটের সিদ্ধান্ত, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি প্রত্যাশা। ইনোভিশন কনসালটিংয়ের এ জরিপ পরিচালনায় সহযোগিতা করে ব্রেইন ও ভয়েস ফর রিফর্ম।











































