একজন ফিলিস্তিনি তিন সপ্তাহ বয়সী ভাতিজি সিলা আল-ফাসিহর হাত ধরে আছেন, যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মারা গেছে। ২৫ ডিসেম্বর গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের মর্গ থেকে ছবিটি তোলা। ছবি : এএফপি
দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি শরণার্থীশিবিরে গত কয়েক দিনে তীব্র শীতে তিন ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। খাদ্য, পানি ও জরুরি শীতকালীন সরঞ্জাম সরবরাহে ইসরায়েলের অবরোধ অব্যাহত থাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। আলজাজিরা বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিচালক আহমেদ আল-ফাররা নিশ্চিত করেছেন, বুধবার তিন সপ্তাহ বয়সী সিলা মাহমুদ আল-ফাসিহ মারা গেছে।
এ ছাড়া গত ৪৮ ঘণ্টায় শীতজনিত কারণে তিন দিন ও এক মাস বয়সী আরো দুটি শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
আল-ফাররা আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে (সিলা) সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল এবং স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তাঁবুতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তার শরীরের তাপমাত্রা এতটাই কমে যায় যে শরীরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়।’
সিলার বাবা মাহমুদ আল-ফাসিহ জানান, পরিবারটি আল-মাওয়াসি শিবিরে একটি তাঁবুতে ‘খারাপ পরিস্থিতিতে’ বাস করছিল।
এটি গাজার ভূমি ও বালুর টিলার একটি এলাকা, যা খান ইউনিসের উপকূলের কাছে অবস্থিত।

আল-মাওয়াসিকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও গত ১৪ মাসে ইসরায়েলি হামলায় এটি বারবার আক্রান্ত হয়েছে। আল-ফাসিহ আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বালুর ওপর ঘুমাই। আমাদের কাছে যথেষ্ট কম্বল নেই এবং তাঁবুর ভেতরে ঠাণ্ডা অনুভব করি।
আমাদের অবস্থা একমাত্র আল্লাহ জানেন। আমাদের পরিস্থিতি খুবই কঠিন।’
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাঁবুটি বাতাস থেকে সুরক্ষিত ছিল না এবং মাটি ছিল ঠাণ্ডা। মঙ্গলবার রাতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। শিশুটি রাতে তিনবার কান্না করে জেগে উঠেছিল।
সকালে তার মা-বাবা তাকে নিথর অবস্থায় খুঁজে পান। শরীর শক্ত হয়ে কাঠের মতো হয়ে গিয়েছিল বলে জানান আল-ফাসিহ। পরে তিনি শিশুটিকে নাসের হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ বলেন, ‘শিশুটি তীব্র ঠাণ্ডায় জমে মারা গেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, এই স্থানটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ী নিরাপদ মানবিক এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এই আক্রমণে গাজার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা প্রায় ২৩ লাখ মানুষের সমান। শীতের ঠাণ্ডা ও বৃষ্টির মধ্যে শত শত মানুষ উপকূলবর্তী তাঁবু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণ সংস্থাগুলো খাবার ও সরবরাহ পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছে। কম্বল, গরম কাপড় ও জ্বালানি কাঠেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
আল-ফাররা বলেন, ‘এই যুদ্ধের অন্যায্যতার ফল ও গাজা উপত্যকার মানুষের ওপর এর প্রভাবের একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ এটি।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।