শেষের দিন গুনছেন রাসেল মাহমুদ

রাসেল মাহমুদ জিমি। ছবি : সংগৃহীত

হকি মাঠে তাঁকে আলাদা করা গেছে সহজেই। স্টিকের কারুকাজ, গতি, ড্রিবলিংয়ে জাতীয় দলেও যেন আর সবার চেয়ে এগিয়ে থেকেছেন এক ধাপ। দীর্ঘ তাঁর ক্যারিয়ার। সেই ২০০৩ সাল থেকে খেলে আসছেন জাতীয় দলে।

এখানেও ছাড়িয়ে আর সবাইকে। সেই রাসেল মাহমুদ জিমি এবার বেলা শেষের ডাক শুনছেন।

আগামী এএইচএফ কাপের দলে রাসেলকে বিবেচনা করছে না ফেডারেশন। টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে ২০ ফেব্রুয়ারি ৬২ জন খেলোয়াড়কে ফিটনেস টেস্টের জন্য ডাকা হলেও সেখানে রাখা হয়নি তাঁকে।

ফেডারেশন থেকে বলা হচ্ছে, ৩২-৩৩ বছরের বেশি বয়সের খেলোয়াড়কে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা। তাতে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলা সবাই টিকে গেলেও বাদ পড়ে গেছেন ৩৭ বছর বয়সী রাসেল। ‘ফেডারেশন বয়স বেঁধে দিয়ে কী করে একজন খেলোয়াড়কে আটকে দিতে পারে? এটা অন্যায়।’—আর্তনাদ রাসেলের।

জাতীয় দলের কোচ করা হয়েছে মামুনুর রশিদকে। রাসেল মাহমুদের ফিটনেস ক্যাম্পে ডাক না পাওয়া নিয়ে তিনি আপত্তি করেননি। হতে পারে রাসেলের নৈপুণ্যের ওপরও খুব একটা আস্থা নেই কোচের। নৈপুণ্যে ভাটার টান দেখা গেছে। মোহামেডানের হয়ে গত লিগেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন রাসেল মাহমুদ।স্টিকে গোল কমেছে, ২০১৬-তে ৩৭ গোল করা তারকা এবার গোল করেছেন মোটে ১১টি। একই আসরে সোহানুর রহমান সবুজ ৩৯ গোল করে রফিকুল ইসলাম কামালের পুরনো রেকর্ড হুমকিতে ফেলেছিলেন। খেলার সময়ও কমেছে রাসেল মাহমুদের, একটানা ১৫ মিনিট কমই খেলতে পেরেছেন। সর্বশেষ এশিয়ান গেমসে ছয় ম্যাচে করেছেন ১ গোল।

হাংজুর সেই আসরে বিদায়ি ম্যাচ খেলতে চান কি না—রাসেল মাহমুদের কাছে এমনটাও নাকি জানতে চাওয়া হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। ইন্দোনেশিয়ায় তার আগের আসরে রাসেলের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মামুনুর রহমান চয়ন অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু রাসেল রাজি হননি বলেই জানিয়েছেন সেবারের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব এহসান। রাসেল নিজে যদিও বিষয়টি স্বীকার করেননি। যেমন মাঠ মাতিয়েছেন, সমানভাবে মাঠ গরম করেছেন বলেও সব সময় তাঁকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন তিনি বারবার। সর্বশেষ লিগেও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাঁকে ১২ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। মাঠে যেখানে গোলমাল, সেখানেই পাওয়া গেছে রাসেলকে। সর্বশেষ ঘরোয়া আসর বিজয় দিবস হকির ফাইনালেও বিমানবাহিনীর কাছে নৌবাহিনীর হারের পর নৌবাহিনীর খেলোয়াড়রা যে উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিয়েছিলেন, তাতেও অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সে সময় মাঠে উপস্থিত থাকা ফেডারেশন সভাপতি ও বিমানবাহিনী প্রধান হাসান মাহমুদ খাঁন। ফেডারেশন থেকে তখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত দলগতভাবে নৌবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল।

সব মিলিয়ে বয়সের বাঁধ দিয়ে এবার যে জাতীয় দল থেকে দূরে রাখা হচ্ছে তাঁকে, তাতে বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। এত দিন সব সমালোচনা নৈপুণ্য দিয়ে উতরে যাচ্ছিলেন রাসেল মাহমুদ। এবার সেই পারফরম্যান্সও হয়তো পার করতে পারছে না তাঁকে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে এর মধ্যেই রাকিবুল হাসান রকি উঠে আসছেন, আছেন ওবায়দুল হোসেন জয়। পরীক্ষিত মাহবুব হোসেন, রোমান সরকার তো আছেনই। রাসেল মাহমুদের শেষের দিন গোনা তাই শুরু হয়ে গেছে। তবে এমন একজন তারকার শেষটা সুন্দর হওয়াই কাম্য। রাসেল জানিয়েছেন, ‘আরেকটা এশিয়া কাপ খেলেই হয়তো বিদায় বলতাম।’ কিন্তু সেটা কি হবে?

LEAVE A REPLY