বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এই মুহূর্তে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমসহ সব ধরনের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন তিনি। এরই মধ্যে একমাস পূর্ণ করেছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশে ক্ষমতার এই পটপরিবর্তনে ইতোমধ্যে ঢাকার ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব হারাতে শুরু করেছে ভারত, যা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন কর্মপন্থা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে মোদি সরকারকে।
গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এমনটিই দাবি করা হয়েছে ‘শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে। লঙ্কান সংবাদমাধ্যমটি অবশ্য বলছে, স্পষ্টতই বাংলাদেশে প্রভাব কমছে ভারতের, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, সেই চলকগুলো এখনও রয়েছে নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণে।
ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, রাজনাথ সিং সম্প্রতি যা বলেছেন তার পেছনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, তিনি ঘরোয়া নির্বাচনী এলাকায় ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন এবং ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন।
তিনি তার বক্তৃতায় যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে এটি বেশ স্পষ্ট যে তাদের অপ্রত্যাশিত কিছু মোকাবিলা করতে হবে। তার এই ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দটি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি মূলত বাংলাদেশের সাম্প্রতি পট-পরিবর্তনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যেটাকে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মূলত ভারতের সংবাদমাধ্যম এবং কয়েকজন নীতিনির্ধারক গত ৫ আগস্টের পর তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
‘ইন্ডিয়া’স গ্রিপ অন বাংলাদেশ ইজ স্লিপিং: নো লংগার এ পন ইন রিজিওনাল পলিটিক্স’ শীর্ষক নিবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি ভারতের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করা দরকার ছিল— ‘দেখুন, এটি অপ্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু আমরা এটির দিকে নজর রাখছি,’ বা ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, আমরা জানি সেখানে কী ঘটছে।’ আমি নিশ্চিত, ভারতের বেশির ভাগ অংশ অবশ্যই এই ঘটনায় পুরোপুরি হতবাক হয়েছে, কারণ গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ভারত বলে আসছি— বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো।’
নিবন্ধে ড. ইমতিয়াজ বলেন, এখন এখানে যে পয়েন্টটি অনুপস্থিত তা হলো, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিল না; ছিল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর সেটাই ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিশ্চিত তারা এখন বুঝতে পেরেছে, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না করে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনেক ভালো।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের লখনৌতে জয়েন্ট কমান্ডার কনফারেন্সের শেষদিনে বক্তব্য দেন দেশটির কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। মাসখানেক আগে বাংলাদেশের সরকার পতনের বিষয়টি সামনে এনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করুন, ভবিষ্যতে ভারত কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে সেটি নিরূপণের চেষ্টা করুন এবং অপ্রত্যাশিত যেকোনো কিছু মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন।’
সেদিন রাজনাথ আরও বলেন, ভারত-চীন সীমান্তে ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে যা হচ্ছে, তা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।