আমি চাইনি আমার নামে সবার পরিচয় হোক

ইমন চৌধুরী

প্রতিনিয়তই নতুন নতুন গানে শ্রোতাদের মাতিয়ে ফিরছেন জনপ্রিয় শিল্পী ও সংগীত পরিচালক ইমন চৌধুরী। শুধু নিজের গানই নয়, বৈচিত্র্যময় জনপ্রিয় শিল্পী ও মিউশিয়ানদের নিয়ে গড়া গানের দল নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে বর্ণাঢ্য শোও করছেন তিনি। শনিবার রাতে প্রকাশ করেছেন ‘ফুল নেয়া ভালো নয়’ শিরোনামের গান। এর মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করল গানের নতুন দল ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’।

দুটি প্রসঙ্গ ধরে শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।

কবি জসীমউদ্দীনের ‘ফুল নেয়া ভালো নয়’ কবিতা থেকে গান হয়ে উঠল কিভাবে?

কবিতা কমবেশি পড়ি। দেশের আর্ট-কালচারের প্রতি সব সময়ই অন্য রকম একটা মায়া কাজ করে। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন আমাদের সবারই প্রিয়।

তাঁর এই কবিতা দীর্ঘদিন ধরে আমার পছন্দের তালিকায় আছে। তখন থেকেই মনে হয়েছে, এটি খুব সুন্দর গান হতে পারে। এটা আসলে গানই। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কবিতাটিকে গানে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিই এবং কাজ শুরু করি।

এত বড় মানুষের কবিতা থেকে গান করব, অনুমতি ছাড়া তো সম্ভব নয়। তাই কবির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারা গানটি শুনে খুব প্রশংসা করেন এবং অনুমতি দেন। এমনকি কবির অন্যান্য কবিতা নিয়েও কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন। এভাবেই ‘ফুল নেয়া ভালো নয়’ গান হয়ে উঠল। এরপর কক্সবাজার গিয়েছিলাম শো করতে।

হঠাৎ সিদ্ধান্ত হলো, গানটির ভিডিও করে নেওয়া যাক। হুটহাট ভিডিও করা, এ কারণে ভিডিওতে আমাদের দলের সবাই উপস্থিতও নেই।

এর আগে কবি হেলাল হাফিজের ‘পত্র দিও’ কবিতাকে গানে রূপান্তর করেছিলেন। এ রকম আরো কবিতা নিয়ে পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়ই?

অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। আমাদের এত অসাধারণ লেখা আছে, সে সম্পদের সঙ্গে নিজেদের একটু-আধটু যদি যুক্ত করতে পারি, সেটা আমাদের জন্যই বড় বিষয়। অনেক কবিতা পছন্দের তালিকায় আছে, করব।

আলাপে মনে হচ্ছে আপনি সাহিত্যপ্রেমী। ইদানীং কী পড়ছেন?

এখন আসলে র‍্যান্ডম পড়ি। যখন যেটা সামনে পাই, পড়ি। ইদানীং জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা পড়ছি। ইনফ্যাক্ট এখনো সামনেই আছে বই। এ ছাড়া কিছু দিন ধরে গবেষণা করছি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ নিয়ে। নতুন বই যেমন পড়ি, পুরনো-কালজয়ী বইগুলোও পড়ার চেষ্টা করি। প্রচুর বই কিনি। রুমে রাখি, যখন যেটা ইচ্ছা করে, পড়ি। ছোটবেলায় প্রচুর পড়েছি। তখন অবশ্য বই শেষ করার টার্গেট নিয়ে পড়তাম। এখন অতটা সময় হয়ে ওঠে না। তবে বই পড়তে খুবই ভালো লাগে। এটাও গান শোনার মতোই অনুভূতি দেয়।

‘বেঙ্গল সিম্পনি’ গানের দল কবে, কিভাবে গঠিত হলো? কে কে আছেন এই দলে?

সদস্যদের নাম শিগগিরই জানাব। এই দলটা আসলে ন্যাচরালি হয়ে গেছে। ‘হাওয়া’ ছবির প্রচারণার সময় শিল্পীদের নিয়ে একটা গ্রুপ করেছিলাম আমি। তখন সেটা শুধুই ছবির প্রচারণার স্বার্থে ছিল। পরে একসঙ্গে গান করতে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই আমরা দলবদ্ধ হয়ে গেছি। সবার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হয়ে গেল। কোক স্টুডিও বাংলায় ‘কথা কইয়ো না’ করলাম। এরপর এক-দেড় বছর কিভাবে যে গেল, নিজেরাও বুঝিনি। দেশ-বিদেশে অনেক শো করলাম। এভাবেই ১৫-২০ জনের মতো মানুষ এক হয়ে গেলাম। সবাই মিলে আমার সিনেমার গানগুলো করি, কনসার্ট করি। আগে ‘ইমন চৌধুরী অ্যান্ড টিম’ নামে ছিল। কিন্তু আমি চাইনি আমার নামে সবার পরিচয় হোক। সেই সুবাদে ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’ নামটি এলো। সহজ-সরল নাম। বাংলার কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সংস্কৃতির সবাইকে নিয়েই বাংলার সিম্ফনি। ফলে আমরা শুধু নির্দিষ্ট টিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব না, আমাদের সঙ্গে যেকোনো গুণী মানুষ কোলাবরেশন করতে পারবেন। প্রচলিত ব্যান্ডের চেয়ে এখানেই ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’ আলাদা। ব্যান্ডের চেয়ে আমরা একটু বেশি আরকি।

সাইফের ওপর হামলার ঘটনায় যা বললেন আটক শেহজাদের বাবা

ব্যান্ডের বাইরে শিল্পীরা সাধারণত একা পারফরম করেন। অথচ আপনি পারফরম করেন একঝাঁক শিল্পী নিয়ে। এর পেছনের ভাবনা কেমন?

আসলে যখন যেটা ভালো লাগছে, করছি। দেখুন, একটা মানুষ বাঁচেই বা কত দিন! গান-বাজনায় যখন যেটা মনে চাচ্ছে, সেভাবেই করছি। কোনো ধরাবাঁধা ছকে থাকতে চাচ্ছি না। কোক স্টুডিওর গান বলি কিংবা ‘সাদা সাদা কালা কালা’, অনেক মানুষ মিলে গানগুলো করেছি। ফলে এসব গান স্টেজে পারফরম করতে গেলেও অনেক শিল্পীর প্রয়োজন। তা না হলে সেই আবহটা তৈরি হয় না। সো গানের ফরম্যাটই আমাদের এই বড় দলে পরিণত করেছে। এটা পরিচালনা করাও কষ্টের। অনেক সমস্যার মুখে পড়ি। সেটা বলতে চাই না, বরং সমাধান নিয়ে ভাবা উচিত।

পরবর্তী কনসার্ট কোথায়?

ফেব্রুয়ারিতে একটি বড় কনসার্ট করব রাজশাহীতে। সেটার প্রি-প্রডাকশন করছি এখন। আমাদের কনসার্টগুলো সময় নিয়ে, প্রস্তুতি নিয়েই করতে হয়। অনেক প্রস্তাব আসে, তবে বড় টিম এবং সাউন্ডের কিছু দিক বিবেচনা করে সব কনসার্ট করা হয়ে ওঠে না।

গানে আর কী নিয়ে ব্যস্ততা এখন?

অনম বিশ্বাসের ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’ ছবির সংগীত পরিচালনা করছি। এ ছাড়া ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’র আরেকটি গান রেডি। শিগগিরই ভিডিও শুটিং করব। খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে গানটি তৈরি করেছি। আসলে ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’র প্রতিটি গানই আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে হবে। ঈদের আগ পর্যন্ত আমাদের টিমের গানগুলো করতে চাই। এ ছাড়া আরো কিছু ছবির কাজও হাতে আছে। সময়মতো জানাব।

LEAVE A REPLY