জীবনাচার বদলে দেওয়া ম্যারাথন

আল আমিন ও পাপিয়া। ছবি : সংগৃহীত

‘ম্যারাথন হচ্ছে শুনলেই রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। বিদেশেও কয়েকটি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। যদিও এখন আমার বয়স হয়েছে, এত লম্বা পথ দৌড়াতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু এতে স্বাস্থ্যের উপকারিতা আছে। ওজন কমানো কিংবা হৃৎপিণ্ড ও রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে অনেক সাহায্য করে’, ম্যারাথনের গুরুত্বের কথা এভাবে শুনিয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী শৌখিন দৌড়বিদ আশিকুজ্জামান।

গত শনিবার হয়ে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথনেও দৌড়েছেন তিনি। শুধু স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা ভেবেই তাঁর মতো হাজারো অ্যামেচার দৌড়বিদ এখন ম্যারাথনে অংশ নিচ্ছেন।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বাংলাদেশে এখন ম্যারাথন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের এতটাই আগ্রহ ছিল যে নির্ধারিত সময়ের আগে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করতে হয়েছে আয়োজকদের।

গত দুই মাসে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথনের ছয়টি আসর বসেছে। ঢাকা ছাড়াও কক্সবাজার, সিলেট, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয়েছে দৌড়বিদদের মিলনমেলা। স্বাস্থ্যের উপকারিতা তো আছেই, পাশাপাশি সেরাদের কাতারে থাকতে পারলে মিলছে অর্থ পুরস্কারও। রাজধানীর ৩০০ ফিটের প্রশস্ত রাস্তায় হয়ে যাওয়া সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে ৪২ কিলোমিটারে প্রথম হয়ে চার লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন জাতীয় দৌড়বিদ মোহাম্মদ আল আমিন।আগের দুটি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনেও সেরা হয়েছিলেন তিনি। ১০০ মিটার কিংবা ২০০ মিটার আল আমিনের ফেভারিট হলেও ম্যারাথন এখন তাঁর চাহিদার শীর্ষে থাকে।

‘ম্যারাথনে আর্থিক পুরস্কার তো খুব বেশি অ্যাথলেট পায় না। সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ জন। কিন্তু অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।

এতেই বোঝা যায়, ম্যারাথনের সঙ্গে অনেক মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা সৃষ্টি করেছে। ম্যারাথন শুধু শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায় না, এটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বাড়ায়। এমনও হয় যে অনেক দিন পর পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এতে ভ্রাতৃত্বও বাড়ে’, বলেন আল আমিন। শুধু পুরুষরা নন, বিভিন্ন বয়সী নারীরাও ম্যারাথনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। পেশাদার খেলোয়াড়দের সঙ্গে অপেশাদারদের সংখ্যাও অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। ম্যারাথনে নারী ইভেন্টে কয়েক বছর ধরে দাপট দেখিয়ে চলেছেন পাপিয়া খাতুন। সর্বশেষ ইভেন্টেরও সেরার মুকুট উঠেছে তাঁর মাথায়। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে নারীরা এখন ম্যারাথনে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়ে পাপিয়া বলেন, ‘নারীরাও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এখন খুব সতর্ক। সেই জায়গা থেকে তারা আগ্রহী হচ্ছে। আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি একজন গৃহিণী কিংবা চাকরিজীবী নারী আমার সঙ্গে দৌড়ে অংশ নিচ্ছে। এর মানে, তারাও সুস্থ থাকার পথ খুঁজে নিচ্ছে।’ অর্থ পুরস্কার থাকায় পেশাদার খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করেন পাপিয়া, ‘আর্থিক পুরস্কার আছে বলে অনেক জাতীয় খেলোয়াড় এখন অংশ নিচ্ছে। যদিও এতে অ্যামেচারদের পুরস্কার জেতার সুযোগ কমে যায়।’

তবে হঠাৎ করে ম্যারাথনে দৌড়াতে নেমে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল। অপেশাদাররা মূলত একা একাই প্রস্তুতি নেন। আবার পাড়ায়-মহল্লায় গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ক্লাবও। তাতে প্রস্তুতির সুযোগ একরকম মিলছে, আগ্রহও বাড়ছে ম্যারাথনে।

LEAVE A REPLY