সংগৃহীত ছবি
বিশ্বের শীর্ষ ৬৫টি ব্যাংক ২০২৪ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে মোট ৮৬৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে, যা ২০২৩ সালের ৭০৭ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৬২ বিলিয়ন ডলার বেশি। ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ছিল এমন প্রায় ৫০টি বড় ব্যাংকের মধ্যে একটি যারা আগের বছরের তুলনায় এই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি করেছে।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে এই অর্থায়নের বৃদ্ধিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলা হয়েছে। কারণ, এটি ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতাকে আরো শক্তিশালী করে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)-এর ২০২৪ সালের ইনভেস্টমেন্ট আউটলুক অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নিট শূন্য নিঃসরণ অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে তেল, গ্যাস এবং কয়লার বার্ষিক বিনিয়োগ অর্ধেকেরও কম করতে হবে।
এই তথ্য উঠে এসেছে আটটি পরিবেশবাদী সংস্থার গঠিত জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থ প্রতিবেদন ২০২৫ থেকে।
তবে মোট অর্থায়নের দিক থেকে ভারতের এসবিআই ব্যাংকের অংশ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এসবআই ২০২৪ সালে জীবাশ্ম জ্বালানিতে আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৬.৫ মিলিয়ন ডলার বেশি অর্থায়ন করেছে, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৬২ বিলিয়ন ডলার।
এর ফলে ব্যাংকটি তালিকায় ৪৯তম স্থান থেকে উঠে ৪৭তম স্থানে আসে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসবিআই-এর মোট জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থায়ন ছিল ১০.৬ বিলিয়ন ডলার।
এই তালিকায় শীর্ষে ছিল মার্কিন ব্যাংক জেপিমর্গান চেজ, যারা ২০২৪ সালে ৫৩.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি কম্পানিগুলোকে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৫ বিলিয়ন ডলার বেশি।
বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট রিস্ক হরিজোন জানায়, ভারতের ব্যাংকগুলো কয়লা খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে।
২০২৪ সালের মার্চে বিএসই তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০০০ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র দুইটি – ফেডারেল ব্যাংক এবং আরবিএল ব্যাংক – স্পষ্টভাবে কয়লা বর্জনের নীতি গ্রহণ করেছে।
তাদের মতে, অর্থনৈতিকভাবে এখন আর কয়লা সস্তা নয়। নবায়নযোগ্য শক্তি এবং স্টোরেজ প্রযুক্তি এখন কয়লার সমান বা কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ব্যাংক অর্থায়নের বৃদ্ধির পেছনে বর্জন নীতির শিথিলতা এবং পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসা দায়ী। এটি আগে কেবল উত্তর আমেরিকার প্রবণতা ছিল, এখন তা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।
মার্চে মার্কিন ব্যাংক ওয়েলস ফার্গো ঘোষণা দেয় যে, তারা ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য হবার পরিকল্পনা বাতিল করছে। এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের শুরুতে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইরান, লিবিয়া ও ইয়েমেনের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে, যারা এখনো প্যারিস চুক্তির অংশ নয়।
২০২৪ সালে ব্যাংকগুলোর ফসিল ফুয়েল ফিনান্সিং বৃদ্ধি পায়, যা বিগত বছরের ধারার বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসায় মোট ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন হয়েছে। প্যারিস চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ২০১৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত ৬৫ ব্যাংক এই খাতে মোট ৭.৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে।
২০২৪ সালে অধিগ্রহণ ও একত্রীকরণ (এম এন্ড এ) খাতে অর্থায়ন ১৯.২ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৮২.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এটি সরাসরি নতুন অবকাঠামো তৈরি না করলেও, জীবাশ্ম জ্বালানি কম্পানিগুলোর ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে — যা বিপরীতভাবে জ্বালানির নির্ভরতা আরো দীর্ঘায়িত করছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।