কোটা ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করল যুক্তরাষ্ট্র

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ জুলাই) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আন্দোলনে সহিংসতার বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। 

এদিন ব্রিফিংয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলছে। শাসক বাহিনীর হাতে অন্তত ছয় ছাত্র নিহত হয়েছে।

ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় শাখা ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছে, বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের ওপর। এবং তারা গত দেড় দশক ধরেই বারবার এটি করে আসছে। আপনারা কি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবেন?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই বিষয়ে আমি নির্দিষ্ট করে কোনো কথা বলব না। তবে আমি বলব, ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের সময় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমরা নজরে রেখেছি।

এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুরোধ অব্যাহত রেখেছি এবং যে কোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই। 

এরপর তাকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ম্যাথিউকে প্রশ্ন করা হয়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের তরুণ ছাত্র আবু সাঈদ তার সহপাঠীদের বাঁচাতে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। কিন্তু শাসক বাহিনী তাকে গুলি করতে দ্বিধাবোধ করেননি।

এমনকি সে বুঝতেও পারেনি যে, তাকে গুলি করা হয়েছে। এভাবেই নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। সারা বিশ্ব বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং এ জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু যখন জনগণের (ভোটের) অধিকার ছিনতাই করা হলো, তখনই হঠাৎ আপনারা নীরব হয়ে গেলেন। কেন এমন হলো?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রথমত, এটা সঠিক নয়।

আপনি আমাকে এই সপ্তাহজুড়ে বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে কথা বলতে শুনেছেন – গত সোমবার বলেছি – আমার মনে হয় আমি গতকালও আবার বলেছি, আমি আজ আবারও বলছি – শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে যেকোনও সহিংসতার নিন্দা করি আমরা। 

তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়টি ঢাকায় আমাদের দূতাবাস খুব কাছ থেকে দেখছে এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। বিক্ষোভে লোক মারা যাওয়ার, নিহত হওয়ার খবরও আমরা দেখেছি। আমরা আবারও, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার বিষয়ে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

এরপর এক সাংবাদিক বাংলাদেশ বিষয়ে পৃথক প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গত সোমবার থেকে বাংলাদেশে যা ঘটছে তা এই মঞ্চ থেকে আপনি নিশ্চিত করেছেন এবং তার নিন্দাও জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই ছয় জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন এবং এই ছাত্রদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিটি করার ঘোষণা করেছেন। তিনি আরো ঘোষণা করেছেন, সরকার (নিহতদের) প্রতিটি পরিবারকে সুরক্ষার জন্য চাকরি এবং প্রয়োজনীয় আয়ের বিষয়ে খেয়াল রাখবে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়েটি বর্তমানে বিচারাধীন বিষয়। এদিকে বিরোধী বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে– সহিংস ছাত্র আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাহত করার জন্য বিরোধীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এটি শিবির, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে বানচাল করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রথম বিষয় হচ্ছে— আমি সেই ক্লিপটি দেখিনি, তাই আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। আর বাদ-বাকি আপনি যেসব প্রশ্ন করেছেন সেসব বিষয়ে কোনো আপডেট আমার কাছে নেই। ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেই আমি ঠিক এই বিষয়েই আমার উত্তর  জানিয়েছে।

সূত্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

LEAVE A REPLY