২৬ ডিসেম্বর জরুরি উদ্ধারকর্মীরা কাজাখ শহর আকতাউয়ের কাছে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী বিমানের দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। ছবি : এএফপি
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ দেখে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, গত ২৫ ডিসেম্বর আজারবাইজান এয়ারলাইনসের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে রাশিয়াই দায়ী হতে পারে। ওই দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছে। তবে কিরবি এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেননি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিমানটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুলির শিকার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এটি চেচনিয়ায় অবতরণের চেষ্টা করেছিল। ক্রেমলিন অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে চেচনিয়ার পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত জটিল’।
কিরবিকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বিধ্বস্ত বিমানটির যেসব ছবি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের চোখে ধরা পড়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজারবাইজান মনে করে ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের কারণে বিমানটির জিপিএস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর এতে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে আসা গুলি বা এ জাতীয় কিছুর আঘাত লাগে।
আজারবাইজান রাশিয়াকে দায়ী করেনি।
তবে দেশটির পরিবহনমন্ত্রী রাশাদ নাবিয়েভ জানিয়েছেন, বিমানটি ‘বাইরের হস্তক্ষেপে’র শিকার হয়েছে এবং অবতরণের সময় আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সবাই (যারা বেঁচে ফিরেছে) বলেছে, বিমানটি যখন গ্রোজনির ওপর ছিল তখন তারা তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে।’
নাবিয়েভ আরো বলেন, তদন্তকারীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন, ‘কোন ধরনের অস্ত্র বা রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।’
এ ছাড়া দেশটির সরকারপন্থী একজন এমপি রাশিম মুসাবেকভ বলেছেন, ‘রাশিয়ার ভূখণ্ডে গ্রোজনির আকাশে বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এটা প্রত্যাখ্যান করা অসম্ভব।
’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পাইলটকে গ্রোজনিতে জরুরি অবতরণ করতে বলা হয়েছিল। নিকটবর্তী বিমানবন্দরগুলোর পরিবর্তে তার মতে এটিকে কোনো জিপিএস সুবিধা ছাড়া দূরে কাস্পিয়ান সাগরের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।
ফ্লাইট সহকারী জুলফুকার আসাদভ চেচনিয়ার আকাশে থাকার সময় ‘বাইরের হামলার মতো কিছুতে’ আক্রান্ত হওয়ার সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এর প্রভাবে বিমানের ভেতরে আতঙ্ক তৈরি হয়। আমরা সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। তাদের নিজ আসনে বসিয়েছি। ওই সময় আরেকটি হামলা হলো ও আমার বাহুতে আঘাত লাগল।’
এমব্রায়ের-১৯০ মডেলের বিমানটির পাইলটদের প্রশংসা করা হচ্ছে। কারণ ২৯ জন যাত্রীর জীবন বাঁচানো গেছে। তবে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে হামলার কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের সংখ্যা বাড়লেও ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘এই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলমান আছে এবং তদন্তের ফল না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো মূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনা করি না।’
এদিকে কাজাখ কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসা করছে এবং তদন্তের বিষয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বাকু থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া ও কাজাখস্তান কমনওয়েলথ অব ইনডেপেনডেন্ট স্টেটস বা সিআইএস থেকে একটি কমিটির প্রস্তাব করেছে এই দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য। সিআইএস রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি আঞ্চলিক সংগঠন। অন্যদিকে আজারবাইজান আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছে।
সূত্র : বিবিসি









































