ছবিসূত্র : এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিমান সংস্থা কোয়ান্টাসের ৬০ লক্ষ গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়েছে গেছে। বিমান সংস্থাটিকে সেবা দেওয়া একটি পৃথক প্লাটফর্মে সাইবার হামলার পর এসব তথ্য ফাঁস হয়ে যায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোয়ান্টাস তাদের ৬০ লাখ গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণের জন্য তৃতীয় পক্ষের একটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। গত ৩০ জুন সেখানে কিছু অস্বাভাবিক কার্যকলাপ শনাক্ত করা হয়।
এখানে গ্রাহকদের নাম, ইমেইল, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ ও ভ্রমনের তথ্য সংরক্ষিত ছিল।
এক বিবৃতিতে কোয়ান্টাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তথ্য ফাঁসের বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে এখনো পুরো ঘটনা অনুসন্ধানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্যান্টাস জানিয়েছে, চুরি হওয়া তথ্যের পরিমাণ ‘উল্লেখযোগ্য’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে আশ্বস্ত করে সংস্থাটি বলেছে, পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, আর্থিক তথ্য বা ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ও পিন নম্বর চুরি হয়নি, কারণ এসব তথ্য ওই সিস্টেমে সংরক্ষিত ছিল না।
ব্রিচের ঘটনা জানার পর ক্যান্টাস অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ, অস্ট্রেলিয়ান সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার এবং অস্ট্রেলিয়ান ইনফরমেশন কমিশনারের দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছে।
ক্যান্টাস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ভেনেসা হাডসন গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং জানি এই ঘটনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরো জানান, গ্রাহকদের জন্য একটি বিশেষ সহায়তা হটলাইন চালু করা হয়েছে এবং কেউ চিন্তিত হলে সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।
তবে ভেনেসা হাডসন স্পষ্ট করে বলেছেন, এই সাইবার হামলার ফলে ক্যান্টাসের ফ্লাইট পরিচালনা বা বিমান চলাচলের নিরাপত্তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
এই হামলার মাত্র কয়েকদিন আগেই এফবিআই একটি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছিল যে, ‘স্ক্যাটার্ড স্পাইডার’ নামক একটি সাইবার অপরাধী গোষ্ঠী এয়ারলাইন খাতকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ান এয়ারলাইনস এবং কানাডার ওয়েস্টজেট-ও গত দুই সপ্তাহে অনুরূপ সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ‘স্ক্যাটার্ড স্পাইডার’ গোষ্ঠী যুক্তরাজ্যের এম অ্যান্ড এসসহ একাধিক খুচরা বিক্রেতার ওপর সাইবার হামলার তদন্তেও মূল সন্দেহভাজন হিসেবে রয়েছে। ক্যান্টাসের এই ঘটনা অস্ট্রেলিয়ায় চলতি বছরে একাধিক ডেটা ব্রিচ বা তথ্য ফাঁসের সর্বশেষ সংযোজন।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ানসুপার এবং নাইন মিডিয়াতেও বড় ধরনের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।
অস্ট্রেলিয়ার তথ্য কমিশনারের দপ্তর (ওএআইসি) ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানায়, ২০২৪ সাল ছিল রেকর্ডে থাকা তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ বছর তথ্য ফাঁসের দিক থেকে। এই পরিসংখ্যান ২০১৮ সাল থেকে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ।
অস্ট্রেলিয়ান প্রাইভেসি কমিশনার কার্লি কিন্ড বলেন, আমরা যে ধরণের প্রবণতা দেখছি তা থেকে ধারণা হচ্ছে, সাইবার হামলাকারীদের কারণে তথ্য ফাঁসের হুমকি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহবান জানান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাইবার হামলা প্রমাণ করে যে, উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোতেও তথ্য সুরক্ষা এখন বড় চ্যালেঞ্জ এবং তাতে সাধারণ নাগরিকদের আস্থা ও নিরাপত্তা দুটোই প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
সূত্র : বিবিসি