সুপার টাইফুন রাগাসা : প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে চীন

ছবিসূত্র : রয়টার্স।

সুপার টাইফুন রাগাসা ঘনিয়ে আসছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংডং থেকে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্যাটাগরি ৫ হারিকেনের সমতুল্য রাগাসা এই বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। এর ফলে ফিলিপাইন, তাইওয়ান, হংকং এবং দক্ষিণ চীনে ভারি বৃষ্টিপাত ও বাতাস বইছে।

সরকারি সম্প্রচারক আরটিএইচকে-এর তথ্য অনুযায়ী, হংকংয়ে ঘূর্ণিঝড় রাগাসা আঘাত হানেনি, তবে আজ সকালে এটি শহর অতিক্রম করে শক্তিশালী বাতাস এবং ভারি বৃষ্টি নিয়ে। আরটিএইচকে-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪০০ টিরও বেশি গাছ ভেঙে পড়ার, ১৫টি জায়গায় বন্যা এবং এক জায়গায় ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে তাইওয়ানে রাগাসার প্রভাবে সৃষ্টি ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূতাত্ত্বিকরা এটিকে ‘পাহাড় থেকে আসা সুনামি’ বলছেন।

তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের হুয়ালিয়েন জেলার গুয়াংফু শহরে রাগাসার প্রভাবে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো ১৫২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বন্যার আশঙ্কায় বুধবার স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।

ভারি বৃষ্টির ফলে একটি হ্রদের পানি উপচে পড়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। 

তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী চো জুং-তাই বিপর্যন্ত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ‘যেখানে যেভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা কেন কার্যকর হয়নি তা তদন্ত করতে হবে। কাউকে দোষারোপের জন্য নয়, সত্য উদঘাটনের জন্য এটা করা হবে।’

সাধারণত তাইওয়ান প্রায়ই টাইফুনের মুখে পড়ে। তবে মানুষ দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কারণে প্রাণহানির সংখ্যা কম থাকে।

কিন্তু মঙ্গলবারের প্রবল বর্ষণে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এছাড়া লেকের পানি উপচে পড়লে তা হুয়ালিয়েনের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গুয়াংফু শহরে ঢুকে যায়।

বুধবারও হুয়ালিয়েনে বৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে নতুন বন্যা সতর্কতা দিলে গুয়াংফুর মানুষ ছুটে যায় নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। স্থানীয় ও উদ্ধারকর্মীরা চিৎকার করে বলেন, ‘পানি আসছে, দ্রুত দৌড়ান।’ একজন আশ্রয়প্রার্থী নারী বলেন, ‘পানি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত আমরা ফিরব না। এটা খুবই বিপজ্জনক।’ আশ্রয়কেন্দ্রটি ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

উদ্ধারকাজের উপপ্রধান হুয়াং চাও-চিন বলেন, ‘বৃষ্টি কমে আসায় এবং ব্যারিয়ার হ্রদের অনেকটা পানি ইতিমধ্যে বেরিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবারের মতো আবার বন্যার ঝুঁকি নেই।’

সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ কেন ব্যর্থ?

স্থানীয় কাউন্সিলর লামেন পানাই জানান, সরকার যে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিল, তা বাধ্যতামূলক ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল ওপরের তলায় যেতে। কিন্তু যা ঘটেছিল, সেটা কেবল মানুষ সরিয়ে নিয়ে ঠেকানো সম্ভব ছিল না।’

হুয়ালিয়েনের ডাকপিয়ন হসিয়ে চিয়েন-তুং বলেন, ‘পানি আসছিল যেনো সুনামির মতো। আমি কোনোরকমে পোস্ট অফিসের দ্বিতীয় তলায় উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছি। বাড়ি ফিরে দেখি আমার গাড়ি বসার ঘরে ভেসে এসেছে।’

দমকল বিভাগ জানিয়েছে, সব মৃত ও নিখোঁজ মানুষ গুয়াংফুতেই। সেখানে বন্যায় একটি প্রধান সেতু ভেসে গেছে। তাইওয়ানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধারকর্মী পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনীও ৩৪০ জন সেনা মোতায়েন করেছে। সেনারা সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে খাবার বিতরণ করছে। বন্যায় শহরের চারপাশে ভেসে এসেছে গাড়ি ও মোটরসাইকেল। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার ২০০ মানুষ নিজেদের বাড়ির ওপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন, আর বাকিরা আত্মীয়দের কাছে গিয়েছেন। সরকার জানিয়েছে, ব্যারিয়ার লেক থেকে প্রায় ৬ কোটি টন পানি বেরিয়ে গেছে। যা প্রায় ৩৬ হাজার অলিম্পিক মানের সুইমিং পুলের সমান।

চীনের সমবেদনা

তাইওয়ান সরকারের প্রতি বেইজিং থেকেও বিরল সমবেদনা জানানো হয়েছে। চীনের তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিস এক বিবৃতিতে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে। 

হুয়ালিয়েন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়, আবার এখানে দ্বীপের স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যও বাস করেন। টাইফুন রাগাসা সোমবার থেকেই তাইওয়ানে আঘাত হানছে। এটি বর্তমানে সুপার টাইফুন থেকে দুর্বল হয়ে চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও হংকং উপকূলে আঘাত হানছে। রাগাসার প্রভাবে তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার (২৮ ইঞ্চি) বৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯ সালে তাইওয়ানের দক্ষিণে টাইফুন মোরাকটের আঘাতে প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয় এবং ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
 

LEAVE A REPLY